‘শিক্ষাই জাতির
মেরুদণ্ড’ কথাটি
সঠিক
নয়।
বলা উচিত
“সুশিক্ষাই জাতির
মেরুদণ্ড”।
কারণ কোনো
জাতি
কতটা
উন্নত
তা
নির্ণীত হয়
সে
জাতির
সুশিক্ষার মান
দ্বারা। সুশিক্ষাবঞ্চিত জাতি
মানসিক
বিকারগ্রস্ততার শিকার।
কুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতি
অধঃপতনের অতল
গহ্বরে
হারিয়ে
যায়।
কুশিক্ষা গ্রহণ
করার
চেয়ে
মূর্খ
থাকা
অনেক শ্রেয়। যে
শিক্ষা
কোনো
জাতিকে
দুর্নীতিমুক্ত করতে
পারে
না,
পারে
না
নীতি-
নৈতিকতার বিকাশ
ঘটাতে
সে
শিক্ষা
অবশ্যই
কুশিক্ষা।
তবে
সুশিক্ষার প্রশ্নে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান।
সুশিক্ষা শুধু
পুরুষরা গ্রহণ
করবে
আর
নারীরা
বঞ্চিত
হবে;
তা
হতে
পারে
না।
আমাদের
অনেকের
বদ্ধমূল ধারণা
হলো
নারী
শিক্ষার প্রয়োজন নেই।
নারীরা
তো
ঘরের
রান্না-বান্না, সন্তান লালন-পালন ছাড়া ভিন্ন
কোনো
দায়িত্ব পালন
করে
না।
তাহলে
তাদের
অতবড়
শিক্ষিত হওয়ার
প্রয়োজন কী?
এটি
একটি
ভ্রান্ত ও
অজ্ঞতাসুলভ ধারণা।
কারণ
কোনো
জাতির
উন্নতি
সাধনের
জন্য
পুরুষের একক
প্রচেষ্টা যথেষ্ট
নয়।
বরং
নারী-পুরুষ উভয়েরই সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।
তাই
নারী-পুরুষ উভয়কেই সুশিক্ষা অর্জন
করতে
হবে।
নারী
শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও
দার্শনিক নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে
একজন
শিক্ষিত মা
দাও,
আমি
একটি
শিক্ষিত জাতি
উপহার
দেব।’
এই
সহজ
সরল
কথাটি
থেকেই
নারী
শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে
আসে।
তবে
নারীদের দ্বীনি
শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার
গুরুত্ব বা
প্রয়োজনীয়তা প্রমাণের জন্য
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের দুটি
হাদিসই
যথেষ্ট। হাদিসে
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ
করেন,
‘প্রতিটি মুসলমানের ওপর
দ্বীনি
শিক্ষা
অর্জন
করা
ফরজ।’
এই
হাদিসে
‘মুসলমান’ শব্দ
দ্বারা
নারী-
পুরুষ
উভয়কেই
বোঝানো
হয়েছে।
এই
হাদিস
থেকে
বোঝা
যায়,
দ্বীনের অপরিহার্য জ্ঞান
অর্জনে
নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নেই।
পুরুষের জন্য
‘ফরজে
আইন’
পরিমাণ
দ্বীনি
জ্ঞান
অর্জন
করা
যেমন
জরুরি,
নারীর
জন্যও
তেমন
জরুরি।
বরং
ক্ষেত্রবিশেষে নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব অনেক
বেশি।
কারণ
নারীর
শিক্ষা-দীক্ষার ওপর নির্ভর করে
তার
সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার বিষয়টি। যেমন একটি শিশুর
শিক্ষা
ও
চরিত্র
গঠনের
দায়-দায়িত্ব বাবা- মা উভয়ের
হলেও
সন্তানের শিক্ষা-
দীক্ষা
ও
চরিত্র
গঠনে
মায়ের
ভূমিকা
অধিকতর
গুরুত্বপূর্ণ। কারণ
এসময়
সন্তানের মন
থাকে
কোমল
ও
নরম
আর
সন্তান
থাকে
মায়ের
ছত্রছায়ায়। তাই
মায়ের
শিক্ষা-দীক্ষা সন্তানের ওপর
খুব
বেশি
প্রভাব
ফেলে।
পক্ষান্তরে বাবা
জীবিকা
উপার্জনের তাগিদে
সারাদিন বাইরে
থাকেন।
তাই
সন্তান
থেকে
বিচ্ছিন্ন বাবার
শিক্ষা-দীক্ষা তার সন্তানের ওপর
খুব
একটা
প্রভাব
ফেলতে
পারে
না।
মা
যদি
দ্বীনি
শিক্ষা
বঞ্চিত
হন,
তার
আচার-আচরণ যদি হয়
দ্বীনি
শিক্ষার পরিপন্থী, তাহলে
তার
অবুঝ
শিশু
মায়ের
কাছ
থেকে
দেখা
শরিয়তবিরোধী কর্মকাণ্ডকেই স্বাভাবিক মনে
করবে।
আর
শরিয়তের বিষয়গুলো তার
কাছে
অস্বাভাবিক মনে
হতে
থাকবে।
উদাহরণত, কোনো
মা
যদি
পর্দাহীন বাড়ির
বাইরে
ঘোরাফেরা করেন,
বেগানা
পুরুষের সঙ্গে
অবাধে
চলাফেরা- উঠাবসা
করেন
তাহলে
তার
সন্তান
এটাকেই
স্বাভাবিক, ন্যায়সঙ্গত ও
বৈধ
বলে
ধারণা
করবে।
তার
কচি
মনে
এটাই
গভীর
রেখাপাত করবে।
এর
বিপরীতটাকে সে
মনে
করবে
অস্বাভাবিক, অসামাজিক ও
অজ্ঞতাপ্রসূত। তার
কচি
মনের
এই
বোধ-বিশ্বাস তার পরবর্তী জীবনে
বিশাল
প্রভাব
ফেলতে
পারে।
তার
সত্
হওয়ার
পেছনে
প্রতিবন্ধক হয়ে
দাঁড়াতে পারে।
তাই
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম নারী
শিক্ষার প্রতি
অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।
হাদিস
শরীফে
আছে,
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ
করেন,
‘আমি
শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’
তিনি
যেমন
পুরুষদের শিক্ষক,
তেমনি
নারীদেরও। তাই
তো
দেখা
যায়
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের ওপর
সর্বপ্রথম যখন
ওহি
নাজিল
হয়
তখন
তিনি
সে
ওহির
সংবাদ
সর্বপ্রথম একজন
নারীর
কাছে
নিয়ে
আসেন।
আর
সেই
সৌভাগ্যবান নারী
হলেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের সহধর্মিণী হজরত
খাদিজা
(রা.)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম নারী
শিক্ষা
বাস্তবায়নের জন্য
একটি
দিন
নির্ধারণ করে
দেন।
সেদিন
নারীরা
একটি
স্থানে
সমবেত
হতেন।
আর
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম সেখানে
উপস্থিত তাদের
ওহির
জ্ঞান
দান
করতেন।
তাদের
আল্লাহ
তায়ালার হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধান
শিক্ষা
দিতেন।
হাদিস
শরীফে
আছে,
হযরত
আবু
সাইদ
খুদরি
(রা.)
বলেন,
একজন
নারী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের কাছে
এসে
অভিযোগ
করে
বলেন,
হে
আল্লাহর রাসুল!
পুরুষরা তো
আপনার
হাদিস
ও
শিক্ষা
এককভাবে লুফে
নিচ্ছে,
আপনি
আপনার
পক্ষ
থেকে
আমাদের
জন্য
একটি
দিন
নির্ধারণ করে
দিন,
যেদিন
শুধু
আমরা
আপনার
কাছ
থেকে
জ্ঞান
অর্জন
করব,
যা
আল্লাহ
তায়ালা
আপনাকে
দান
করেছেন। তাদের
কথা
শুনে
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম বললেন,
তোমরা
অমুক
দিন
অমুক
স্থানে
সমবেতহও। তারা
ওই
স্থানে
সমবেত
হলে
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম তাদের
কাছে
আসেন
এবং
তাঁকে
যে
জ্ঞানদেয়া হয়েছে
তা
থেকে
তাদেরশিক্ষা দেন।
(বুখারি,
মুসলিম)
রাসুল
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া
সাল্লাম নারী
শিক্ষার প্রতি
গুরুত্ব দেয়ার
কারণে
তার
সবসহধর্মিণী শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন
করেছিলেন। রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের স্ত্রী
হজরত
আয়েশা
ও
হজরত
উম্মে
সালমা
(রা.)ছিলেন অগাধ ইলমের
অধিকারিণী।
হজরত
আয়েশা
(রা.)
ছিলেন
সর্বাধিকহাদিস বর্ণনাকারী সাতজন
সাহাবির অন্যতম। রাসুল
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া
সাল্লামের বিশাল
হাদিস
ভাণ্ডারের প্রধান
কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছিলেন তিনি।
ইসলামের চার
খলিফাসহ বড়
বড়
সাহাবিরা পর্যন্ত যে
কোনো
সমস্যার সঠিক
সমাধানের জন্য
হজরত আয়েশা (রা.)-এর শরণাপন্ন হতেন।
ইমাম
হাকিম
(রহ.)
বলেন,
শরিয়তের এক-
চতুর্থাংশ ইলম
হজরত
আয়েশা
(রা.)
থেকে
এসেছে।
এভাবে
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের যুগে
তাঁর
পরিবারের মহিলারাসহ অন্য
মহিলা
সাহাবিরা রাসুলের কাছ
থেকে
দ্বীনি
ইলম
শিক্ষা
লাভ
করে
ইলমের
খেদমতে
অসাধারণ অবদান রেখেছেন।
সংগ্রহঃ ইন্টারনেট